সমাস| তৎপুরুষ |কর্মধারয়,| দ্বন্দ্ব|দ্বিগু|বহুব্রীহি|অব্যয়ীভা| নিত্য সমাস|বাক্যাশ্রয়ী সমাস |অলোপ সমাস|

ব্যাকরণে সমাস কথাটির অর্থ হল সংক্ষিপ্ত বা সংক্ষেপ  ব্যুৎপত্তিগত অর্থ অর্থাৎ সম্ —√অস্ + ঘঞ্ = সমাস হয় যার অর্থ হল সংক্ষেপ  মনের ভাবকে যথাযথভাবে সহজ সরল  সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য সমাস পড়া বা জানার প্রয়োজন  তাই সমাস বলতে আমরা বুঝি বাক্যের দুই বা তার বেশি পদকে এক পদে পরিণত করে সংক্ষেপ করার রীতিকে বলা হয় সমাস  সমাসের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দিক হল
(সমস্যমান পদ 
(ব্যাসবাক্য
(সমস্তপদ /সমাসবদ্ধ পদ 
(সমস্যমান পদ — যে সকল পদের যোগে সমাস তৈরি হয় তাদের সমস্যমান পদ বলে  যেমন— পথের রাজা = রাজপথ,  বিলেত থেকে ফেরত = বিলেত ফেরত  এখানে 'পথের', 'বিলেত'  হল পূর্বপদ  রাজাফেরত হল পরপদ বা উত্তরপদ 
(ব্যাসবাক্যবিগ্রহ বাক্য — সমস্যমান পদগুলি দিয়ে যে বাক্য বা বাক্যাংশ তৈরি হয় তাকে ব্যাসবাক্য বলে  যেমন— বিলেত থেকে ফেরতপথে রাজা 
(সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ — পূর্বপদ  পরপদ বা উত্তরপদের মিলনে যে নতুন পদ সৃষ্টি হয় তাকে বলে সমস্তপদ 
রাজার পুত্র = রাজপুত্র  —এই সমাসটিতে  'রাজার পুত্র' —হল ব্যাস বাক্য,  'রাজপুত্র' —হল সমস্তপদ, 'রাজারএবং 'পুত্র' —হল সমস্যমান পদ  
 সন্ধি  সমাসের পার্থক্য :-
(সন্ধি হল বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলন আর পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত দুই বা তার বেশি পদের একপদে পরিণত হওয়াই হল সমাস  যেমন দেব + আলয় = দেবালয় → সন্ধিদেবের আলয় = দেবালয় → সমাস 
(সন্ধিতে উভয় পদের অর্থ বজায় থাকে কিন্তু সমাসের ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব সমাস ছাড়া অন্য সমাসে সমানভাবে গুরুত্ব নাও পেতে পারে  নব + অন্ন = নবান্ন → সন্ধি  দশ আনন যার = দশানন → সমাস 
(সন্ধিতে বিভক্তি লোপ পায় না কিন্তু সমাসে বিভক্তি লোপ পায়  সিংহ + আসন = সিংহাসন → সন্ধি  সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন → সমাস 

 সমাসের শ্রেণীবিভাগ :- বাংলা ভাষায় সমাস মূলত ছয় প্রকার— (তৎপুরুষ, (কর্মধারয়, (দ্বন্দ্ব,  (দ্বিগু, (বহুব্রীহি, (অব্যয়ীভাব  এছাড়াও (নিত্য সমাস, (বাক্যাশ্রয়ী সমাস  (অলোপ সমাস আছে 

() তৎপুরুষ সমাস:- যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি বা অনুসর্গ লোপ পায় এবং পরপদ বা উত্তরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে  যেমন— গোলায় ভরা = গোলাভরা  বধুকে দেখা = বধু দেখা  জল থেকে আতঙ্ক = জলাতঙ্ক  এখানে '' 'কেহল দুটি বিভক্তি এবং 'থেকেহল অনুসর্গ 
তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণীবিভাগ— কারক  অকারকের বিভক্তি অনুযায়ী তৎপুরুষ সমাসকে ছটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে 
(কর্ম তৎপুরুষ সমাস :- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের কর্ম বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে কর্ম তৎপুরুষ বলে  যেমন— মাছকে ধরা = মাছ ধরা  ধানকে কাটা = ধানকাটা  গাড়িকে চালানো = গাড়িচালানো  ফুলকে তোলা = ফুলতোলা 
(করণ তৎপুরুষ সমাস:-  যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের তৃতীয় বা করণের বিভক্তি/অনুসর্গ লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে করণ তৎপুরুষ সমাস বলে  যেমন— ঢেঁকি দ্বারা ছাঁটা = ঢেঁকিছাঁটা  মায়া দ্বারা কান্না = মায়াকান্না  শ্রী দ্বারা হীন = শ্রীহীন  সীমা দ্বারা বদ্ধ = সীমাবদ্ধ 
(নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস:- যে তৎপুরুষ সমাসে নিমিত্ত কারকের বিভক্তি বা অনুসর্গ লোপ পায় তাকে নিমিত্ত তৎপুরুষ বলে  যেমন— লোকের নিমিত্ত হিত = লোকহিত  বিদ্যার নিমিত্ত আলয় = বিদ্যালয়  ছাত্রদের জন্য আবাস = ছাত্রাবাস  দেবতার জন্য আলয় = দেবালয় প্রভতি 
বিদ্র: :- নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় এবং অনুসর্গ লোপ পায় 
() অপাদান তৎপুরুষ সমাস:- যে সমাসে অপাদান কারকের অনুসর্গ লোপ পায় সেই তৎপুরুষ সমাসকে অপাদান তৎপুরুষ সমাস বলে  যেমন— সত্য থেকে ভ্রষ্ট = সত্যাভ্রষ্ট  জন্ম হতে অন্ধ = জন্মান্ধ  পদ থেকে চ্যুত = পদচ্যুত  শাপ থেকে মুক্ত = শাপমুক্ত  এখানে 'থেকে', 'হতে', হল অনুসর্গ  এক্ষেত্রে অনুসর্গ লোপ পায়
() অধিকরণ তৎপুরুষ :- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের অধিকরণ কারকের বিভক্তিঅনুসর্গ লোপ পায় তাকে অধিকরণ তৎপুরুষ বলে  যেমন— অকালে বোধন = অকালবোধন ( অগ্রে গণ্য = অগ্রগণ্য ( কারায় বদ্ধ = কারাবদ্ধ ( লাটদের মধ্যে বড় = বড়লাট (মধ্যে এখানে '', '' 'মধ্যেগুলি লোপ পেয়েছে এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে 
(সম্বন্ধ তৎপুরুষ :- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের সম্বন্ধ পদের বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে সম্বন্ধ তৎপুরুষ বলে  যেমন— রাজার পুত্র = রাজপুত্র ( পথের রাজা = রাজপথ (এর বিশ্বের মিত্র = বিশ্বামিত্র (এর এখানে '' 'এরবিভক্তি লোপ পেয়েছে 
(নঞ তৎপুরুষ সমাস:- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদ নঞর্থ অব্যয়তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলে  যেমন— নয় শুভ = অশুভ  নয় সভ্য = অসভ্য  নয় ব্যক্ত = অব্যক্ত  নয় লাজ = নিলাজ  নয় দেশ = বিদেশ  নয় মিল = গরমিল 
() উপপদ তৎপুরুষ সমাস :ধাতুর সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় যোগ করে কৃদন্ত পদ গঠিত হয়  আর এই কৃদন্ত পদের পূর্ববর্তী নামপদকে বলা হয় উপপদ  সুতরাং যে তৎপুরুষ সমাসে উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের সমাস হয় তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে  যেমন— ইন্দ্রকে জয় করেছেন যে = ইন্দ্রজিৎ  গৃহে বাস করে যে = গৃহস্থ  অগ্রে জন্মেছে যে = অগ্রজ  সব জানে যে = সবজান্তা ইত্যাদি  এখানে 'জয়', 'বাস', 'অগ্রে', এবং 'সবপদগুলি হল উপপদ 
(উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস :- বিভিন্ন উপসর্গ যোগে যে শব্দ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস বলে   ক্ষেত্রে উপসর্গের অর্থই প্রাধান্য পায়  যেমন— দ্বীপের সদৃশ = উপদ্বীপ  নদীর সদৃশ = উপনদী  অক্ষির প্রতি = প্রতিপক্ষ  বে হিসাব = বেহিসাবী  ভাতের অভাব = হাভাত  কন্ঠের সমীপে = উপকণ্ঠ ইত্যাদি 
(ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাস:-  যে তৎপুরুষ সমাসে ব্যাপ্তির ভাব স্পষ্ট হয়তাকে ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাস বলে  যেমন— আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত = আগাগোড়া  চিরকাল ধরে শত্রু = চিরশত্রু  চিরকাল ধরে স্মরণীয় = চিরস্মরণীয়  চিরকাল ব্যাপী স্থায়ী = চিরস্থায়ী  আদি থেকে অন্ত = আদ্যন্ত 


(কর্মধারয় সমাস :-  যে সমাসে বিশেষ্য বা বিশেষণ জাতীয় পূর্বপদের সঙ্গে বিশেষ্য বা বিশেষণ জাতীয় পরপদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়তাকে কর্মধারয় সমাস বলে  যেমন— নব যে অন্ন = নবান্ন  যিনি কর্তা তিনি মশায় = কর্তামশায় 

 কর্মধারয় সমাসের শ্রেণীবিভাগ :- (সাধারণ কর্মধারয় সমাস (মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস (উপমান কর্মধারয় (উপমিত কর্মধারয় এবং (রূপক কর্মধারয় সমাস 

(সাধারণ কর্মধারয় সমাস :- এই সমাসে কখনো বিশেষ্য + বিশেষ্যবিশেষণ + বিশেষ্যবিশেষণ + বিশেষণ পদের মধ্যে সমাস হয়  যেমন— যিনি দাদা তিনি বাবু = দাদাবাবু  যিনি গুরু তিনি মা = গুরুমা  যিনি ডাক্তার তিনি বাবু = ডাক্তারবাবু  এখানে বিশেষ্যের সঙ্গে বিশেষ্যর সমাস হয়েছে 

বিশেষণ + বিশেষণ — যে মৃদু সেই মন্দ = মৃদুমন্দ  যে সাদা সে সিধা = সাধাসিধা  অম্ল অথচ মধুর = অম্লমধুর  কাঁচা অথচ মিঠা = কাঁচামিঠা 

বিশেষণ + বিশেষ্য — নীল যে নদ = নীলনদ  ফুল যে বাবু = ফুলবাবু  বড় যে দাদা = বড়দাদা 
(মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস :- যে কর্মধারয় সমাসের মধ্যপদগুলি লোপ পায় সেই কর্মধারয় সমাসকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে  যেমন— সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন  বিজয় সূচক উৎসব = বিজয়োৎসব  ভিক্ষা লব্ধ অন্ন = ভিক্ষান্ন  এখানে 'চিহ্নিত', 'সূচক', 'লব্ধপদগুলি মধ্যপদ  সমাসবদ্ধ পদে এগুলির অস্তিত্ব নেই 
(উপমান কর্মধারয় সমাস:- যে কর্মধারয় সমাসে পূর্বপদ উপমান এবং পরপদ সাধারণ ধর্মবাচক শব্দের সঙ্গে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে  যেমন— কাজলের মতো কালো = কাজলকালো  চিড়ের মতো চ্যাপ্টা = চিড়েচ্যাপট  কুসুমের মতো কোমল = কুসুমকোমল  হিমের ন্যায় শীতল = হিমশীতল  'কালো ', 'চ্যাপ্টা', 'কোমল',  'শীতলশব্দগুলি সাধারণ কর্মবাচক শব্দ 
(উপমিত কর্মধারয় সমাস :-  যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদ উপমেয় বাচক এবং পরপদ উপমান বাচক হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে  এখানে উপমেয় পদের অর্থ প্রাধান্য পায়  যেমন— মুখ সোনার ন্যায় = সোনামুখ  বদন চাঁদের ন্যায় = চাঁদবদন  কথা অমৃতের ন্যায় = কথামৃত  মুখ হাঁড়ির ন্যায় = হাঁড়িমুখ  চরণ কমলের ন্যায় = চরণকমল  এখানে 'চরণউপমেয়, 'কমলেরউপমানএবং 'ন্যায়তুলনাবাচক শব্দ 
(রূপক কর্মধারয় সমাস :-  যে কর্মধারয় সমাসে পূর্বপদ উপমেয় এবং পরপদ উপমানের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয় তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে  যেমন— ভব রূপ সাগর = ভবসাগর  মন রূপ পাখি = মনপাখি  কথা রূপ অমৃত = কথামৃত  জ্ঞান রূপ বৃক্ষ = জ্ঞানবৃক্ষ  ক্রোধ রূপ অনল = ক্রোধানল  এখানে ক্রোধ হল উপমেয় এবং অনল হল উপমান পদ 

(দ্বন্দ্ব সমাস :যে সমাসে পূর্বপদ  পরপদের অর্থ সমানভাবে গুরুত্ব পায়তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে  যেমন রাত  দিন = রাতদিন  ভাই  বোন = ভাইবোন ইত্যাদি 

 দ্বন্দ্ব সমাসের শ্রেণীবিভাগ
(মিলনার্থক দ্বন্দ্ব — দুই ব্যক্তি বা বস্তুর মিলন বোঝাতে যে দ্বন্দ্ব সমাস হয়  যেমন— লক্ষ্মী  নারায়ণ = লক্ষীনারায়ন  মাতা  পিতা = মাতাপিতা  দুধ  ভাত = দুধভাত  হর  গৌরী = হরগৌরী ইত্যাদি
(সমার্থক দ্বন্দ্ব :- যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলি সমার্থক বাচক শব্দ হয়  যেমন— জামা  কাপড় = জামাকাপড়  কাগজ  পত্তর = কাগজপত্তর  গাছ  পালা = গাছপালা  টাকা  পয়সা = টাকাপয়সা ইত্যাদি 
(বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব :- যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলি বিপরীত ধর্মী শব্দ হয়  যেমন— লাল  নীল = লালনীল  আলো  অন্ধকার = আলোঅন্ধকার  দিন  রাত = দিনরাত  ছেলে  মেয়ে = ছেলেমেয়ে  ভাই  বোন = ভাইবোন ইত্যাদি 
(সমাহার দ্বন্দ্ব :- দুই বা তার বেশি শব্দের সমষ্টি বা সমাহার বোঝায়  যেমন— মাছ  মাংস = মাছমাংস  নদী  নালা = নদীনালা  মুড়ি  মুড়কি = মুড়িমুড়কি  আলু  পোস্ত = আলুপোস্ত  রাজা  রানি = রাজারানি প্রভৃতি 
(একশেষ দ্বন্দ্ব :-  যে দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্ব বা পরপদের প্রধান না হয়ে সম্পূর্ণ একটা নতুন পদ সৃষ্টি হয় তাকে একশেষ দ্বন্দ্ব বলে  যেমন— সে  আমি = আমরা  তুমি  সে = তোমরা  তুমিআমি  আমরা = আমরা  আপনি  তিনি = আপনারা  সেআমি  তুমি = আমরা ইত্যাদি 
(দ্বিগু সমাস :- দ্বি = দুই  গো < গো শব্দের অর্থ গরু  দুটি গরুর সমাহার  দ্বিগু শব্দটি বিশ্লেষণ করলে এরূপ অর্থ পাওয়া যায়  যে সমাসে পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ  পরপদ বিশেষ্য এবং ব্যাসবাক্যে সমাহার শব্দটি থাকে তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে  যেমন— অষ্ট ধাতুর সমাহার = অষ্টধাতু  শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী  সপ্ত অহের (দিন) = সপ্তাহ  তিন মাথার সমাহার = তেমাথা  পঞ্চ নদের সমাহার = পঞ্চনদ  নব রত্নের সমাহার = নবরত্ন  সাত সমুদ্রের সমাহার = সাতসমুদ্র ইত্যাদি 


(বহুব্রীহি সমাস :-  যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির কোনোটির অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে নতুন অর্থ প্রকাশ করে তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে  যেমন— চন্দ্র চূড়ায় যার = চন্দ্রচূড় (শিব পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ (বিষ্ণু বীনা পাণিতে যার = বীনাপাণি (সরস্বতী



বিদ্র: :- এই সমসের ব্যাসবাক্যে একটি যদ্ শব্দের অর্থ যিনিযার বা যে থাকবে 
 বহুব্রীহি সমাসের শ্রেণীবিভাগ:-
(সমানাধিকরণ বহুব্রীহি :- যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব  পরপদের বিভক্তি একই হয়তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি বলে  যেমন— পক্ব কেশ যার = পক্ককেশ   গৌর অঙ্গ যার = গৌরাঙ্গ  ছিন্ন মুল যার = ছিন্নমূল  নীল কন্ঠ যার = নীলকণ্ঠ  কু আকার যার = কদাকার 
(ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস :- যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব  পরপদে ভিন্ন ভিন্ন বিভক্তি থাকে তাকে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি বলে  যেমন— শূল পাণিতে যার = শূলপাণি  চন্দ্র চূড়ায় যাঁর = চন্দ্রচুড়  রত্ন গর্ভে যার = রত্নগর্ভা ইত্যাদি 
(মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস :যে বহুব্রীহি সমাসের ব্যাসবাক্যের মধ্য পদগুলো লোপ পায় তাকে বলে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস  যেমন— কুম্ভের ন্যায় কর্ণ যার = কুম্ভকর্ণ  বৌ ভাত পরিবেশন করে যে অনুষ্ঠানে = বৌভাত  কমলের ন্যায় অক্ষি যার = কমলাক্ষ  চন্দ্রের মতো আনন্দ যার = চন্দ্রানন ইত্যাদি 
(ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস :-  যে বহুব্রীহি সমাসে পরস্পরের মধ্যে একই প্রকার কাজ বোঝায়তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে  যেমন— চোখে চোখে যে দেখা = চোখাচোখি  গলায় গলায় যে মিল = গলাগলি  কানে কানে যে কথা = কানাকানি ইত্যাদি 
(সহার্থক বহুব্রীহি সমাস :- যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদের সহার্থক বাচক পরপদের সমাস হয় তাকেই সার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে  যেমন— শব্দের সঙ্গে বর্তমান = সশব্দ  স্ত্রীর সঙ্গে বর্তমান = সস্ত্রীক  লজ্জার সঙ্গে বর্তমান = সলজ্জ  শিষ্যের সঙ্গে বর্তমান = সশিষ্য প্রভৃতি 
(নঞ বহুব্রীহি সমাস :- যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ নঞর্থক অব্যয় হয় তাকে নঞ বহুব্রীহি সমাস বলে  যেমন— নাই অন্তর যার = অনন্ত  নাই খাদ যার = নিখাদ  নাই সঙ্গী যার = নিঃসঙ্গ  বে (নাইপরোয়া যার = বেপরোয়া ইত্যাদি 
(সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস :-  যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ হয় সেটিকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস বলে  যেমন— দশ আনন যার = দশানন (রাবণ ত্রি নয়ন যার = ত্রিনয়ন (শিব পঞ্চ আনন যার = পঞ্চানন ইত্যাদি 
(অব্যয়ীভাব সমাস :-  যে সমাসে পূর্বপদ অব্যয়  পরপদ বিশেষ্য এবং সমস্ত পদে অব্যয়ের অর্থ প্রাধান্য পায় সেই সমাসকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে  যেমন— ভাতের অভাব = হাভাত  ফুলের সমীপে = উপকূল  কূলের বিপরীত = প্রতিকূল  দানের সদৃশ = অনুদান  দানের বিপরীত = প্রতিদান  ক্ষুদ্র বন = উপবন  গ্রহণের যোগ্য = অনুগ্রহ ইত্যাদি 
(নিত্য সমাস :- যে সমাসে ব্যাসবাক্য হয় নাব্যাসবাক্যের জন্য অন্য কোনো পদের সাহায্য নিতে হয় তাকে নিত্য সমাস বলে  যেমন— অন্য দেশ = দেশান্তর  অন্য দ্বীপ = দ্বীপান্তর  অন্য যুগ = যুগান্তর  কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র  অন্য মনু = মন্বন্তর  কেবল জ্ঞান = জ্ঞানমাত্র ইত্যাদি 
(অলোপ সমাস :- যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি বা অনুসর্গ কিছুই লোপ পায় না তাকে অলোপ সমাস বলে  যেমন— তেলেভাজা = তেলেভাজা  মেঘে ঢাকা = মেঘেঢাকা  মামার বাড়ি = মামার বাড়ি  দুধে আলতা = দুধেআলতা ইত্যাদি 
(বাক্যাশ্রয়ী সমাস :-  হাইফেন (-) চিহ্ন ব্যবহার করে কোনো বাক্য বা বাক্যাংশ সমাসবদ্ধ একটি পদ রূপে প্রযুক্ত হয়তখন তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে  যেমন— 'সবুজ বাঁচাও কমিটি', 'সব পেয়েছির দেশ', 'বসে আঁকো প্রতিযোগিতা', 'পণপ্রথা বিরোধী আন্দোলন', 'ভারতছাড়ো ডাক', 'ফেলে আসা দিনগুলি', ইত্যাদি 


প্রশ্ন :-
বহু বিকল্প প্রশ্ন :-
(সমাসের বুৎপত্তি হল— (সমা √আস +        (সমা √অস +        (সম্ √অস +        (সম্ + আস  

(ব্যাসবাক্যের প্রথম পদকে বলে — (সমস্যমান পদ       (ব্যাসবাক্য       (পূর্বপদ      (পরপদ  

(উভয় পদের অর্থ প্রাধান্য পায়— (দ্বন্দ্ব সমাসে        (দ্বিগু সমাসে       (তৎপুরুষ সমাসে       (বহুব্রীহি সমাসে 

(সমাসবদ্ধ পদে নতুন অর্থ সৃষ্টি করে — (তৎপুরুষ সমাসে        (বহুব্রীহি সমাসে       (কর্মধারয় সমাসে       (দ্বিগু সমাসে 

() 'বিস্ময়াপন্নসমাসের ব্যাসবাক্য — (বিস্ময় দ্বারা আপন্ন      (বিস্ময়কে আপন্ন     (বিস্ময়ে আপন্ন     (বিস্ময়ের নিমিত্ত আপন্ন 

() 'দিনে দিনেব্যাসবাক্যটির সমাসবদ্ধ পদটি হল— (প্রতিদিন      (রোজ দিন      (দিনদিন      (ফি দিন  

() 'গিরিশএর ব্যাসবাক্য হল— (গিরির ঈশ     (গিরিকে ঈশ       (গিরিতে শয়ন করে যে      (গিরীর ঈশ 

(উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের যে সমাস হয় তাকে বলে — (উপপদ তৎপুরুষ      (নিত্য সমাস      (বহুব্রীহি সমাস      (দ্বন্দ্ব সমাস 

(শাপ থেকে মুক্ত = শাপমুক্ত সমাসটি —  (করণ তৎপুরুষ       (নিমিত্ত তৎপুরুষ       (অপাদান তৎপুরুষ      (কর্ম তৎপুরুষ 

(১০উপমান কর্মধারয় সমাসের পূর্বপদটি হয়— (বিশেষ্য       (বিশেষণ       (অব্যয়        (বিশেষণের বিশেষণ 

(১১যে সমাসে উপমেয়  উপমানের অভেদ কল্পনা করা হয় তা হল
(উপমিত কর্মধারয়      (উপমেয় কর্মধারয়      (রূপক কর্মধারয়       (উপমান কর্মধারয় 
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর ধর্মী প্রশ্ন:-
(সমাস শব্দের অর্থ কি ?
(সমস্যমান পদ কাকে বলে ? উদাহরণ দাও 
(সমাস  সন্ধির মধ্যে মূলগত পার্থক্য কি ?
() 'বহুব্রীহিশব্দের অর্থ কী ?
() 'দ্বন্দ্বশব্দটির অর্থ কী ? একশেষ দ্বন্দ্ব কাকে বলে ?
(নিত্য সমাসের বৈশিষ্ট্য কি ?
(সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি কাকে বলে ?
(উপমান  উপমিত কর্মধারয় সমাসের মধ্যে পার্থক্য কি ?
(নঞ বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে ?
(১০তৃতীয় বা অন্য পদের অর্থ প্রধান হয় কোন সমাসে ?

Post a Comment

0 Comments